বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ‘ডিবি হেফাজতে থাকাকালীন আমাদের হত্যার নির্দেশ ছিল, শেখ হাসিনা সরাসরি এ নির্দেশ দিয়েছিলেন’— এমন দাবি করেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের দশম দিনে উপদেষ্টার আংশিক জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৬ অক্টোবর।
জবানবন্দিতে আসিফ মাহমুদ বলেন,
“আমাদের রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। সেখানে কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য চাপ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন।”
তিনি আরও বলেন,
“ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ ও রমনা জোনের ডিসি হুমায়ুন কবীর আমাদের বলেন— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে এখানে আনা হয়েছে। আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি না হলে হত্যা করা হবে— শেখ হাসিনার এমন নির্দেশ রয়েছে।”
আসিফ জানান, ১৯ জুলাই রাতে সাদা পোশাকধারীরা তাকে গুলশান নিকেতন এলাকা থেকে তুলে নেয়। মাথায় কালো টুপি পরিয়ে একটি মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় কথিত ‘সেনানিবাসের আয়নাঘরে’।
“সেখানে আমাকে জুলাই আন্দোলন প্রত্যাহারে ভিডিও বার্তা দিতে চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হলে ইনজেকশন পুশ করে অজ্ঞান করে ফেলা হয়,”— বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন,
“৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুলে আমার সামনেই পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হন। পরে জানতে পারি, সেখানে ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ চাইনিজ রাইফেল ও শটগান ব্যবহার করে।”
জবানবন্দিতে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, কোটা পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায় এবং পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন আসিফ মাহমুদ সজীব।
তিনি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ গুলির ‘কমান্ডিং অথরিটি’তে থাকা সবাইকে বিচার করার দাবি জানান।
এই মামলায় আসিফের জবানবন্দির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য আসামিরা হলেন—
সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী
রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম
রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল
শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন
কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম