বাংলাদেশ সরকার বিমান বাহিনী আধুনিকীকরণ ও জাতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে চীনের তৈরি জে-১০ সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান ২০টি কেনার একটি প্রস্তাব গ্রহণের পথে রয়েছে। প্রচলিত গণমাধ্যম ও নথিপত্রের তথ্য মতে, বিমানবিমান-কেনা, প্রশিক্ষণ ও আনুষঙ্গিক খরচসহ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি ডলার (প্রায় ২৭,০৬০ কোটি টাকা)। চুক্তি সরাসরি ক্রয় বা G2G (government-to-government) পদ্ধতিতে চীনের সঙ্গে করা হতে পারে।
মিডিয়ায় থাকা খসড়া নথিপত্র অনুযায়ী, ২০টি জে-১০ সিই ফাইটারের মূল্য একে-একটি প্রায় ৬ মিলিয়ন ডলার ধরে মোট বিমানের মূল্য দাঁড়ায় ১২০ কোটি ডলার (প্রায় ১৪,৭৬০ কোটি টাকা)। স্থানীয় ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণ, যন্ত্রাংশ ও পরিবহন খরচ বাবদ আনুমানিক ৮২ কোটি ডলার যোগ হলে, বীমা, ট্যাক্স, এজেন্সি কমিশন, পূর্ত কাজ ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি ডলার। গণনা অনুযায়ী, মূল্য পরিশোধ ২০২৫-২৬ থেকে শুরু করে ২০৩৫-২০৩৬ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে পরিশোধ করা হতে পারে।
জে-১০ সিই হলো চীনের জে-১০সি’র রপ্তানি সংস্করণ; এটি ৪.৫ প্রজন্মের মাল্টি-রোল কমব্যাট প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত। চলতি বছরের মার্চে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের সময় এই প্রস্তাব নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা যায়। আগেই বিমানবাহিনী প্রধানকে সভাপতি করে একটি ১১ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে — এই কমিটি খসড়া চুক্তি পর্যালোচনা, G2G পদ্ধতি প্রযোজ্য কিনা যাচাই ও চীনা প্রতিনিধিদের সঙ্গে দরকষাকষি করে চূড়ান্ত চুক্তি নির্ধারণ করবে। চুক্তিতে প্রশিক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ ও আনুষঙ্গিক সেবাগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, দেশের বিমানবাহিনীর উন্নত লড়াকু বিমান ব্যবস্থার দীর্ঘদিন চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, “কিন্তু যেকোনো দেশ থেকে সরঞ্জাম কেনার আগে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিবেচনা করা জরুরি।”
বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জে-১০ সিই কিভাবে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের সঙ্গে মিশে যাবে—এটি সরকারের জন্য বিবেচনার বিষয়। কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদে উল্লেখ আছে যে জে-১০ সিরিজ ফিল্ডে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে; তবে নির্দিষ্ট যুদ্ধক্ষেত্র সংক্রান্ত দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি — সেগুলো সংবাদসূত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
চূড়ান্ত কেনাকাটার আগে আভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত মূল্যায়ন, চুক্তি-পরিদর্শন ও বাজেট অনুমোদনের প্রয়োজন থাকবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসভা ও পার্লামেন্ট পর্যায়ে প্রযোজ্য নিয়মকানুন মেনে কাজ করা হবে বলে সরকারী সূত্র জানিয়েছে।