রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চর রামকান্তপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নজরুল ইসলাম (৪৭) ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারিয়েছেন। নিখোঁজ থাকার সাত মাস পর গত বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে তার মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয় পরিবারকে। নিহত নজরুল স্থানীয় মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে।
পরিবার জানায়, নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত ছিলেন এবং ২০২০ সালে অবসর নেন। এর আগে ২০১৩ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কঙ্গোতে অংশ নিয়েছিলেন। অবসরের পর কিছুদিন বাড়িতে থাকার পর বাঁধাই মালের ব্যবসা শুরু করেন, কিন্তু তাতে বড় ধরনের লোকসান হয়। আর্থিক সংকটে পড়ে তিনি স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেনের প্রলোভনে রাশিয়া যান, যিনি তাকে জানান— সেখানে ‘শপিং মলে নিরাপত্তাকর্মী’ হিসেবে চাকরি হবে, পরিবারের আপত্তি উপেক্ষা করে নজরুল ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন।
রাশিয়ায় পৌঁছে তাকে এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য করা হয় এবং পরবর্তীতে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। প্রথমদিকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলেও এপ্রিলের শেষ দিকে ফোনে নজরুল স্ত্রীকে বলেন,“এখান থেকে ফেরা আমার পক্ষে সম্ভব না। যদি ফোন বন্ধ দেখাও, ধরে নিও আমি আর নেই।” সেই কথার পর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
দীর্ঘ সাত মাস পরিশ্রম করে খোঁজ নেওয়ার পর গত বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে নজরুল ইসলামের মৃত্যুর খবর জানানো হয় পরিবারকে। তার স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন,“আমি তাকে বারবার নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম, সন্তানদের নিয়ে থাকি। কিন্তু সে ভালো চাকরির আশায় গেছে। এখন চার মেয়েকে নিয়ে আমি কীভাবে বাঁচব, বুঝতে পারছি না।”
নজরুল ইসলামের বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রহিম বলেন,“দালাল ফরিদ আমার ভাইকে প্রলুব্ধ করে রাশিয়ায় পাঠিয়েছে। আমরা অনেক জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। এখন সরকার অন্তত লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করুক।”
অভিযুক্ত দালাল ফরিদ হোসেন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,“সে নিজেই ‘বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’ এজেন্সির মাধ্যমে গিয়েছিল। আমি শুধু যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি।”
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারিয়া হক বলেন,“বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নিহত নজরুল ইসলাম রেখে গেছেন চার কন্যাসন্তান— বড় মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী, দ্বিতীয় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে, আর ছোট দুই মেয়ের বয়স মাত্র ৬ ও ৫ বছর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।